মোঃ মারুফ হোসেন লিয়নঃ সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন তীব্রতর হলে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টা থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ও ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম। ফলে আন্দোলন-সংঘর্ষের খবর না পেয়ে ওই রাত থেকেই নেটবিহীন সৈয়দপুর আরও বাড়তে থাকে উদ্বেগ-উতকণ্ঠা। এ অবস্থায় ঘটনার পরের দিন থেকেই প্রিন্ট সংবাদমাধ্যম বা পত্রিকা কেনার হিড়িক পড়ে সৈয়দপুরে সব জায়গায়। যা বিগত প্রায় ২০ বছরে এমন দৃশ্য সৈয়দপুরে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য পত্রিকা পাঠকদের।ভোর বেলায় ক্রেতাদের ভীড়ে জমে উঠেছে পত্রিকার দোকানগুলো। নিমিষেই শেষ হচ্ছে জাতীয় দৈনিকগুলো। এ যেন অনেক বছর আগের চেনা একটা পরিবেশ। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী পত্রিকা দিতে পারছে না এজেন্টরা। তাদের মতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনলাইনে পত্রিকা পড়তে পারছে না, ফলে প্রিন্ট পত্রিকার চাহিদা বেড়ে গেছে। সৈয়দপুর শহরের পত্রিকা এজেন্ট মজিদুল ইসলাম মন্ডল জানান, পাঠক আর হকার ভাইদের চাহিদা দেখে মনে হচ্ছে ৮/১০ বছর আগের ব্যবসায় ফিরে গেছি। কিন্তু ৩/৪ দিনের জন্য পত্রিকা বৃদ্ধি করে কি লাভ? ক’দিন পরে আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। তিনি বলেন, সারাদিন দোকান খুলে রেখেও অনেক পত্রিকা অবিক্রিত থেকে যায়। কিন্তু এখন পত্রিকা পৌঁছানোর ১/২ ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় পত্রিকা। সৈয়দপুর শহরের পত্রিকা বিক্রেতা আব্দুস সোবহান জানান, পাঠকদের চাপে মাসিক গ্রাহকদের কাছে পত্রিকা পৌছাতে পারছি না। আমাদের সাইকেল থামিয়ে ২/৪ টাকা বেশি দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছে পত্রিকা। এভাবে পত্রিকার কদর বাড়বে- তা ভাবতেই অবাক লাগছে। সৈয়দপুরের হকার রফিকুল বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও পত্রিকা বিক্রি করে সারাদিন ২০০ টাকা পেতাম না। এখন দুপুরের আগেই সব পত্রিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক নিয়মিত পাঠককেও পত্রিকা দিতে পারছি না। বেচা-বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে দেওয়া বাদ দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ১৫ পিস নিতাম। এখন প্রতিদিন ৩০ পিসের বেশি ওই পত্রিকাটি বিক্রি করেছি। অন্য পত্রিকার চাহিদাও অনেক।সৈয়দপুর প্লাজা ‘ ফারুক কম্পিউটার’র স্বত্বাধিকারী ফারুক আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন- ১০ বছর ধরে প্রিন্ট সংবাদমাধ্যমের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি দেশের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল গুলোর প্রতি ঘণ্টার পাঠক। প্রতি ঘণ্টায় সার্চ করে নিউজ পড়ে নিতাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট না থাকয় আমি যেন নিউজ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। বাধ্য হয়ে এ কয়দিন পত্রিকা কিনেছি বাজার থেকে।শুক্রবার সকালে পাঁচমাথা মোড় থেকে পত্রিকা কেনার সময় সৈয়দপুর উপজেলার মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবি মোঃ আনোয়ারুল হাফিজ প্রতিবেদককে বলেন- মনে হচ্ছে আমরা অন্তত দুই যুগ আগে চলে গিয়েছি। ভীড় করে পত্রিকা কেনার এমন দৃশ্য ১৫-২০ বছর আগে দেখা যেতো। সৈয়দপুর শহরের দ্যা ল্যাইসিয়াম কোচিং সেন্টারের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম সবুজ জানান, সত্যিই প্রিন্ট পত্রিকা পড়ার মজাটাই আলাদা। এতোদিন অনলাইনে নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম। কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি প্রিন্ট পত্রিকার তুলনা অনলাইন হতে পারে না।
আপনার মতামত লিখুন :