মোঃ মারুফ হোসেন লিয়নঃ গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নীলফামারীর সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। ১০ সজ্জার এই কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে যান শতাধিক রোগী। তবে কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় তীব্র লোকবল সংকট সহ পুরোনো ভবন আর জায়গা কম হওয়ায় সেবা নিতে যাওয়া লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে।
নাম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। অথচ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে নেই কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও গাইনি চিকিৎসকের দেখা মেলা ভার। রয়েছে অন্যান্য লোকবল সংকটও। চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে দেড় যুগ ধরে। বিনামূল্যে ২৭ ধরনের ঔষধ দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েক মাস ধরে রোগীরা পাচ্ছে না কোনো প্রকার ঔষধ ।স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে তিনজন ভিজিটর থাকার বদলে একজন ভিজিটর নিয়মিত গর্ভকালীন চেকাপ করান। কেন্দ্রটিতে নেই কোনো গাইনি চিকিৎসক। ফলে মাতৃত্বকালীন সমস্যা নিয়ে যাওয়া রোগীরা পড়েন বিপাকে। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে একজন মেডিকেল অফিসার তাও আবার সপ্তাহে তিনদিন পোস্ট থাকলেও নেই তার সহযোগী কোনো অফিস সহায়ক । নেই কোন পরিস্কার কর্মী এছাড়াও নানা সংকটে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি । বিশেষ করে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে ১৬ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও এই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা।
মা ও শিশু কেন্দ্রে আরও কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সাথে কথা হলে তারা সৈয়দপুরের আলো কে জানান, মহিলা ডাক্তার থাকলে মন খুলে সব সমস্যার কথা বলা যেত। কিন্তু পুরুষ ডাক্তারকে তো সব কিছু সমস্যার কথা বলতে লজ্জা লাগে। তিনি আরও বলেন, মহিলা ভিজিটর ও নার্সরা সব বিষয়ে সমস্যা সমাধান দিতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যত্র যেতে হচ্ছে আমাদের।
লিয়ন ও ঐশী নামে এক দম্পতি সৈয়দপুরের আলো কে বলেন, এখানে একজন গাইনি ডাক্তার হলে ভালো হতো। অনেক মহিলা আছে যে পুরুষদের সামনে সব কিছু খুলে বলতে পারে না। গাইনি ডাক্তার হলে সব কিছু শেয়ার করতে পারবে। এতে করে ভালো সেবা পাওয়া যাবে । আমরা অনেকদিন ধরে জেনে আসতেছি এখানকার অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো এবং এখানে ড্রাইভারও নেই। অ্যাম্বুলেন্স থাকলে তো আমরা বিপদে আপদে সেবা নিতে পারবো।
সৈয়দপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পাশে মহল্লার বাসিন্দা রুজি আক্তার সৈয়দপুরের আলো কে বলেন , আমরা মেয়েরা তো ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে আসি। কিন্তু আমাদের সব কথা তো পুরুষ ডাক্তারকে বলা সম্ভব নয়। আমরা তো সব সময় পুরুষদের সাথে যোগাযোগও করতে পারি না আমাদের সমস্যা নিয়ে। একজন গাইনি ডাক্তার দিলে আমরা পরামর্শ নিতে পারবো।
সৈয়দপুর মা ও শিশু কেন্দ্রের ভিজিটর ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকা মোছাঃ রুমা খাতুন সৈয়দপুরের আলো কে বলেন, এটি ১০ সজ্জার হাসপাতাল। এখানে তিনজন ভিজিটরের জায়গায় আমি একজন আছি । তিনি বলেন একটা মানুষ কখনোই ২৪ ঘন্টা সেবা দিতে পারে না সেখানে প্রতিদিন আমাকে একাই দিন- রাত রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। ফলে আমার নানান সমস্যা হচ্ছে এখানে যদি আরো দুইজন ভিজিটর নিয়োগ দেওয়া হয় বা শিফটিং এর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমার রোগীদের সেবা আরো ভালো ভাবে দিতে পারবো । এখানে রোগীর চাপ প্রচুর। রোগীর চাপ সামলানো খুব কষ্টকর।
সৈয়দপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের রেজিস্টার সৈয়দপুরের আলো কে জানান, প্রতিদিন দেড় শতাধিকেরও বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা সেবানীতে আসেন। বর্তমান আমরা রোগীকে এমনিতেই সেবা দিতে পারছি কিন্তু কোন প্রকার ঔষধ দিতে পারছি না। যদি আমাদের এখানে একটা মহিলা গাইনী ডাক্তার থাকতো তাহলে অনেক ভালো হতো ।
সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার (এফসিএইচ-এফপি) ডা. মো. সোহেল রানা তিনি সৈয়দপুরের আলো কে জানান, সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল ২০০১ সালে শয্যা সংখ্যা ১০টি বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। জনবল, অকাঠামো ও নানা ঘাটতি সত্ত্বেও যথাসম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে । তবে এখনো এটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ফলে গর্ভবতী মা ও নবজাতকদের কাঙ্খিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুয়েল রানা সৈয়দপুরের আলো কে বলেন, ২০০১ সালে শয্যা সংখ্যা ১০টি বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। জনবল, অকাঠামো ও নানা ঘাটতি সত্ত্বেও যথাসম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সেবা চালু হবে বলে আশ্বাসদের তিনি।
সবমিলিয়ে সৈয়দপুরের প্রত্যন্ত এলাকার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যেতে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের। তবে শিগগির ভবন নির্মাণ , অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু, গাইনি ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়সহ সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিষ্ঠাতা : মোঃ মারুফ হোসেন লিয়ন
নিবার্হী সম্পাদক: মোঃ ফিরোজ আহমেদ
মোবাইলঃ ০১৪০৬০৬৮১৪৫ & ০১৮৩৩৭৭৫৫৯৯ ইমেইলঃ [email protected] অফিসঃ শহীদ স্মরণী ডাক বাংলো মোড় সংলগ্ন,সৈয়দপুর নীলফামারী
Copyright © 2025 Saidpurer Alo. All rights reserved.