দর্শক শূন্য সিনেমা হলে ফিরছে দর্শক, দিনে লাখ টাকার টিকিট বিক্রি


admin@saidpureralo প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৮, ২০২৫, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন /
দর্শক শূন্য সিনেমা হলে ফিরছে দর্শক, দিনে লাখ টাকার টিকিট বিক্রি

মোঃ মারুফ হোসেন লিয়নঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে ৪ টি সিনেমা হল ছিলো বিভিন্ন সময়ে হলের দর্শক কমে যাওয়ায় পযাক্রমে সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান সৈয়দপুর শহরে একটি মাত্র সিনেমা হল রয়েছে যেতি তামান্না সিনেমা হল নামে সবার কাছে পরিচিত সেই হলটি দর্শক খরা হওয়ায় প্রায় বন্ধোর পথে যাচ্ছিল কিন্তু ঈদের দিন থেকে এই সিনেমা হলে প্রতিদিন লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়নি। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন হলের মালিকেরা। অন্যদিকে মানসম্মত চলচিত্র নির্মাণ এবং হলে বসে সিনেমা দেখার পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে দর্শক।

 

সূত্রমতে, সৈয়দপুর শহরের চারটি সিনেমা হলের মধ্যে তিনটিই বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। শহরের অভিজাত সিনেমা হল ছিল ‘বিজলী টকিজ’। ওই সিনেমা হলটিতে “ছুটির ঘন্টা” ছায়াছবিটি কয়েক মাস ধরে চলে। তারপরও দর্শকদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বাস্তব চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর্শক সংকটে বিজলী টকিজ এখন বন্ধ। সেখানে বর্তমানে গড়ে তোলা হচ্ছে অত্যাধিক সুপার মার্কেট ‘চৌধুরী টাওয়ার’। একই অবস্থা লিবার্টি সিনেমা হলেরও। সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদ সুপার মার্কেট। আর সৈয়দপুর সেনানিবাসের গ্যারিসন সিমেনা হলটিও বন্ধ করে সেখানে সেনা কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর জনপদের নীলফামারীর বাণিজ্য প্রধান ও শ্রমিক অধ্যূষিত উপজেলা শহর সৈয়দপুর। এক সময় এ শহরটিতে বিজলী টকিজ, লিবার্টি, গ্যারিসন, তামান্নাসহ চারটি সিনেমা হল ছিল। আর এসব সিনেমা হলের প্রতিটি ‘শো’ পরিপূর্ণ থাকতো দর্শকে। শহরের মানুষ ছাড়াও প্রত্যন্ত পল্লীর সব বয়সী মানুষ সিনেমা দেখতে ভীড় করতো সিনেমা হলগুলোতে। সিনেমা হলে প্রবেশের টিকিট সংগ্রহে দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলতো। সিনেমা হলগুলোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়ে দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সপ্তাহের প্রতিটি দিনই জমজমাট থাকতো সিনেমা হলগুলো। দর্শকদের চাহিদার কারণে অনেক বাংলা ছায়াছবি মাসের পর মাস চলতো শহরের সিনেমা হলগুলোতে। ভালো সিনেমা নির্মাণ না হওয়ায় হল বন্ধের অন্যতম কারণ।

কিন্তু এবারের ঈদে হলমুখী হয়েছে সাধারণ দর্শক। সৈয়দপুরের তামান্না সিনেমা হলে শনিবার গিয়ে দেখা গেছে দর্শকে পরিপূর্ণ। এদের মধ্যে ২০ শতাংশ নারী দর্শক রয়েছেন। এই সিনেমা হলে চলছে সাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’ সিনেমাটি।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার শহিদুল ইসলাম নামে দর্শক বলেন, বড় পর্দায় সিনেমা দেখে যে আনন্দ রয়েছে, মোবাইল ফোনে বা স্মার্ট টিভি সেটের সামনে বসে সেই আনন্দ নেই। তিনি স্ত্রী ও চার বছর বয়সের কন্যাশিশুকে নিয়ে সিনেমা দেখেছেন। তিনি বলেন, এই হলের পরিবেশ ভালো। মহিলা দর্শকদের নিরাপত্তাও রয়েছে, তাই মাঝেমধ্যে এখানে সিনেমা দেখতে আসি।

 

দিনাজপুরের খানসামা থেকে আসা জে আর জামান বলেন, বন্ধু ও ছোট ভাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছি। এর আগে এই হলে ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি দেখেছি। হলের পরিবেশ মোটামুটি ভালো। বসার আসনগুলো আরও উন্নত করার পাশাপাশি শৌচাগার পরিষ্কার রাখতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।

তামান্না সিনেমা হলের অপারেটর আব্দুর রহমান সৈয়দপুরের আলো কে বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছি। এমনও দিন গেছে, দু-তিনজন দর্শক দিয়ে সিনেমা হলের শো চালাতে হয়েছে। কিন্তু এবার ঈদে দর্শকের চাপে দিনে-রাতে মিলে পাঁচটি শো চালাতে হচ্ছে। প্রতিটি শোতে দর্শক পরিপূর্ণ।

নীলফামারী জেলার একমাত্র চালু থাকা তামান্না সিনেমা হলের মালিক মাহবুব আলী ঝন্টু সৈয়দপুরের আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, দর্শকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার ২৬টি সিনেমা হল। এ সময় ঋণ নিয়ে সিনেমা হলের ব্যবসাটি ধরে রেখেছি। এবার আশার আলো দেখছি। প্রতিদিন গড়ে লাখ টাকার ওপরে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, জনপ্রিয় অভিনেতা ও ভালো কাহিনির সিনেমা নির্মিত হলে দর্শক অবশ্যই হলমুখী হবেই। যেখানে মহিলা দর্শক সিনেমা হলে আসা শুরু করেছে, সেখানে বাংলা সিনেমার আবারও ইতিবাচক দিক লক্ষণীয়।