মোঃ মারুফ হোসেন লিয়নঃ সৈয়দপুর রেল বিভাগের এক কর্মকর্তার ঘুষ বানিজ্যের কারনে রেলওয়ের জমি,রেলকোয়াটারও জলাশয় দখল করে ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণ সহ বিক্রয় অব্যাহত রয়েছে। এনিয়ে একাধিক বার অভিযোগ দিয়েও রেলওয়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।ফলে দখলকারীরা রেলওয়ের সম্পত্তি প্রকাশ্যেই দখল বিক্রি করেই চলেছে।
১৮৭০ সালে রেলওয়ের বিশাল কারখানা গড়ে উঠে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। ওই সময় রেল বিভাগ প্রায় সাড়ে ৮০০ একর ভূ-সম্পত্তি এ্যাকোয়ার করে নেয় । রেলের বিশাল ওই কারখানা স্থাপনের কারণেই নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ের শহরে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন ভাগ জমি ও ১ হাজার ৬০০ কোয়ার্টার দখলদারদের দখলে চলে যায়। ২০১৮ সালে তৌহিদুল নামের এক উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দপুরে যোগদান করার পর রেলের পতিত অনেক জমি বা কোয়ার্টার দখলকারীরা দখল করতে পারেনি। রেলওয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকায় প্রায় ২ বছর বন্ধ থাকে রেলের জমি ও কোয়ার্টার দখল ও বিক্রয় বা দখল হয়ে যাওয়া জমিতে স্থাপনা নির্মাণকাজ। কিন্তু ২ বছর পর ওই কর্মকর্তাকে সুকৌশলে অনত্র বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে শরিফুল ইসলাম নামের এক কর্মকর্তা ওই অফিসে যোগদান করার পর আবারও শুরু হয়ে যায় দখলদারদের সাবেক দখল কার্যক্রম।
সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে দেখা যায় , সৈয়দপুর শহরের ফিদালী ইন্সটিটিউট সংলগ্ন একটি বিশাল মাপের পুকুর পারের অর্ধ শতকোটি টাকা মূল্যের জমি দখলকারিরা দখলে নিয়েছে। এর আগে তারা ওই এলাকার কোয়ার্টার ও কোয়ার্টার সংলগ্ন পতিত জমি অবৈধ ভাবে দখল করে সেখানে নির্মান করে পাঁকা ও আধপাকা ঘরবাড়ি। এসব বিষয়ে রেলওয়ের ফিদালী ইন্সটিটিউট এর কেয়ার টেকার রমজানি সহ অনেকেই রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সরিফুল কে অভিযোগ দেয় কিন্তু তিনি দখলদারদের কাছ থেকে বানিজ্য করে রেলওয়ের জমি দখল মুক্ত বা আইনানুগ কোন ব্যবস্হাই নেননি। এর ফলে রেলওয়ের ঐতিহ্য হারাচ্ছে ফিদালী ইন্সটিটিউটটি। এছাড়া শহরের রেলওয়ে ডাকবাংলোর পুর্ব পার্শে রেলওয়ের কোয়ার্টারের ফাঁক জমিতে অবৈধ ভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন রেলওয়ে কারখানার ক্রেন সপ এ কর্মরত নাজমুন নাহার নামের এক ফিটার এস এস।তার টিকিট নাম্বার ২২১৬৪। ওই নারী কর্মচারীর অবৈধভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণের বিষয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী বরাবরে অভিযোগ দিয়েও দৃশ্যমান কোনো ফল মেলেনি। সেখানেও তিনি সখ্যতা গড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া সৈয়দপুর বাংলা হাইস্কুল মাঠের পুর্ব পার্শে হিরা নামের এক ব্যাক্তি ২ টি বহুতল ভবন অবৈধ ভাবে নির্মাণ করলেও উপসহকারী প্রকৌশলী তা দেখেও না দেখার ভান করে চলেছেন।
স্হানীয়দের অভিযোগ, সৈয়দপুর রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সরিফুল তাঁর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে যতগুলি রেলওয়ের পতিত জমিও কোয়ার্টার দখল বিক্রয় সহ জলাশয় দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে, এর আগে রেলওয়ের এত সম্পত্তি কখনো হাতছাড়া হয়নি। তারা বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলীর চাকরির আগে ও পরের সকল সম্পত্তির হিসাব চাওয়া হলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে পরবে, কিভাবে তার দায়িত্বে থাকাকালীন রেলওয়ের সম্পত্তি বেদখল হয়েছে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর শহরের একাধিক দখলকার ও ফিদালী ইন্সটিটিউট এর কেয়ার টেকারের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, স্থানীয় রেল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেই নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে। রেল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না হলে রেলের জমি দখল বা স্থাপনা নির্মাণ কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কজন রেলওয়ে কর্মচারী বলেন, যে লাঠি দিয়ে ভূত তাড়ানো সম্ভব, সেখানেই যদি ভূত থাকে, তাহলে ভূত তাড়ানো অসম্ভব। ১৯৯৬ সালের পর যারা অবসরে গেছেন তাদের বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে রেলওয়ের নিজ আয়ত্তে নেওয়ার কথা এবং যদি কোন রেলওয়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারী অবৈধ ভাবে রেলওয়ের জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে, তাহলে তার অবৈধ ভাবে নির্মিত ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়ে অনত্র বদলি করার বিধান রয়েছে কিন্তু রেলওয়ের কোন কর্মকর্তাই এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেন না।আর একারনেই দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের মুল্যবান সম্পত্তি।
তারা আরো বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ের উন্নয়নে প্রায় প্রতি বছরই কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ হয়। বরাদ্দকৃত ওই অর্থের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ পর্যবেক্ষণ করার কথা উপসহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর। কিন্তু তারা মাসে একবারও গুরুত্ব সহকারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন না। এর ফলে বেশ কয়েকটি উন্নয়নকাজ চলছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব উন্নয়ন কাজে শিডিউল ও প্রাক্কলন নিয়ে তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে এবং উন্নয়ন ও হবে শতভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন,যতক্ষন পর্যন্ত উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেবেন না, ততক্ষণ রেলওয়ের জমি দখলকারীদের কিছুই করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নির্দেশ না দিলে কিছু যদি করতে না -ই পারেন তাহলে সরকার কোন কাজের বেতন দেয় জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে কিছু বলবেন না বলে জানান।
আপনার মতামত লিখুন :