ওয়াক্ফ জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন


saidpureralo প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১০, ২০২৪, ১:১৭ পূর্বাহ্ণ /
ওয়াক্ফ জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সৈয়দপুরে ওয়াক্ফ জমিতে অবৈধ ভাবে নকশা অনুমোদন দেয়ায় যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি বিক্রির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এনিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বাগডোকরা জামে মসজিদ তথা ওয়াক্ফ এস্টেটের বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। এর মধ্যে জসিম বাজার এলাকায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের (পশু হাসপাতাল) এর কাছে রয়েছে প্রায় ৯০ শতক জমি। সরেজমিনে দেখা যায়, এই জমিগুলো সম্প্রতি প্লট আকারে ঘিরে বিভিন্ন ব্যক্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। তাদের বক্তব্য ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতোওয়াল্লীর কাছ থেকে ৩ শ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিতভাবে ৯৯ বছরের জন্য পজেশন নিয়েছেন। ক্রয়-বিক্রয়ের কোন রেজিস্ট্রি হয়নি। প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন,ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক নকশা অনুমোদন নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছি । দেখা গেছে ইতিমধ্যে ৮-১০ টি বহুতল ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বহুতর ভবন নির্মাণ কাজ চলছে প্রায় ১০-১৫ টির। নিয়ম বহির্ভূতভাবে জমি হস্তান্তর, নকশা অনুমোদন ও বহুতল ভবন নির্মাণের মত বেআইনী কাজ অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ ওয়াক্ফ বোর্ড কর্তৃপক্ষ নির্বিকার রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই এই অবৈধ কাজ চালাচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

জানা যায়,সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন সরকার। ওয়াক্ফ জমিতে অবৈধ ভাবে নকশা অনুমোদন দেয়ায় যত্রতত্র ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে প্রকাশ্যে এমন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলেও কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি সেই সময়ে।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ,ওয়াকফ ওই জমিতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণকারী মনি নামে এক ব্যাক্তি জানান, জমিগুলো মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করা। সেজন্য বিক্রিযোগ্য নয়। তবে মোতোওয়াল্লী স্ট্যাম্প করে পজেশন দিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান নকশা অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর বাড়ি করা হয়েছে। এভাবে অনেকেই করেছেন। এতে কোন সমস্যা থাকলে ওয়াক্ফ বোর্ডের লোকজন এসে বাধা দিতো। কিন্তু ২ বছর হয়ে গেল আজ পর্যন্ত কেউ আসেনি। একই জমিতে কাজ করছেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুর ছেলে মনির হোসেন বাড়ি করার জন্য ৩ তলা ফাউন্ডেশনের কাজ করছেন। তিনি জানান, ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি জেনেই জমিটা নিয়েছি। সাব রেজিষ্ট্রি বা কবলা দলিল না হলেও ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতোওয়াল্লী স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে পজেশন হস্তান্তর করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান নকশা অনুমোদন দিয়েছেন। তারপর বাড়ি নির্মাণ করছি। মোজাহারুল ইসলাম নামে এলাকাবাসির অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন শুধু এই বেআইনি কাজ করেনি। তিনি আরও অনিয়ম দূর্নীতি করেছেন। অনুমোদন ছাড়া সরকারী গাছ কাটা, ওয়ান পার্সেন্টেজের টাকা দিয়ে কোন কাজ না করে সম্পূর্ণ ভোগ, ভাতা কার্ডের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়, ভিজিএফ-এর চাল বিক্রি করা।

জানা যায় ,বিগত ৯ মাস থেকে পরিষদের মেম্বারদের বেতন ভাতা বকেয়া রাখা সহ সকল প্রকল্পের কাজ একাই নিয়ে নামমাত্র কাজ করে অর্থ লোপাট করা, কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদে দলীয় দাপটে বসে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্কুলের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা তসরুপ করেছেন।

জানা যায় গত ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর তাকে পাওয়া যাচ্ছে না পরিষদে। এ বিষয়ে মোবাইলে কথা হলে তিনি অস্বিকার করে বলেন আমি কোনো অনুমোদন দেইনি ।

ওয়াক্ফ জমিতে অবৈধ নকশা অনুমোদন দেওয়ায় গত রবিবার (৩ নভেম্বর) সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মোজাহারুল ইসলাম নামে এক এলাকাবাসী।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওয়াকফ জমিতে নকশা অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। সেখানে নকশা অনুমোদনের ফটোকপি সংযুক্ত আছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একজন ইউপি চেয়ারম্যান কোনভাবেই বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন দিতে পারেননা। এরজন্য বাংলাদেশ ওয়াক্ফ বোর্ড রয়েছে।

বাংলাদেশ ওয়াক্ফ বোর্ড রংপুর অঞ্চলের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর ও সেখানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এই জমিতে কোনভাবেই ভবন নির্মাণে নকশার অনুমোদন দেওয়ার অধিকার কেউ রাখেন না। আর ইউপি চেয়ারম্যান দিলে সেটা বেআইনি করেছেন। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।